শেষ অবলম্বন হিসেবে আইসিসি: গণহত্যার অভিযোগে আইসিসি-এর সম্ভাব্য ভূমিকা
বাংলাদেশে ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর শেখ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রী পদে নেই। তবে তার প্রশাসনের সময়ে সংঘটিত alleged মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক সহিংসতার প্রেক্ষিতে যদি কোনো পক্ষ গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করতে চায়, তাহলে তা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর অধীনে কতটা কার্যকর হবে, সেটি বিচার করা গুরুত্বপূর্ণ।
আইসিসি-এর ভূমিকা এবং এখতিয়ার
আইসিসি একটি স্থায়ী আন্তর্জাতিক আদালত, যা গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আগ্রাসনের অপরাধের বিচার করে। তবে এটি তখনই পদক্ষেপ নিতে পারে, যখন একটি দেশের নিজস্ব বিচারব্যবস্থা অপরাধীদের বিচারে ব্যর্থ হয়।
শেখ হাসিনার প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে, আইসিসি-এর অধীনে এ ধরনের মামলা দায়ের করার জন্য নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করতে হবে:
- ২০০২ সালের পর সংঘটিত অপরাধ: রোম স্ট্যাচুটের আওতায় কেবল ২০০২ সালের পর সংঘটিত অপরাধের বিচার করা যায়।
- বাংলাদেশের সদস্যপদ: বাংলাদেশ ২০১০ সালে রোম স্ট্যাচুটে স্বাক্ষর করেছে। ফলে ২০১০ সালের পর থেকে সংঘটিত অপরাধগুলো আইসিসি-এর আওতায় আসতে পারে।
- জাতীয় বিচারব্যবস্থার ব্যর্থতা: প্রমাণ করতে হবে যে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা অপরাধীদের বিচারে অনিচ্ছুক বা অক্ষম।
অভিযোগের ধরন: গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ
আইসিসি-এর রোম স্ট্যাচুট অনুযায়ী:
- গণহত্যা: একটি জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় গোষ্ঠী, বা জাতিগত গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত অপরাধ।
- মানবতাবিরোধী অপরাধ: হত্যা, নির্যাতন, গুম, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ইত্যাদি, যদি তা একটি বৃহৎ পরিকল্পিত বা পদ্ধতিগত আক্রমণের অংশ হয়।
শেখ হাসিনার প্রশাসনের সময় ঘটে যাওয়া alleged ঘটনাগুলোকে এই সংজ্ঞাগুলোর আওতায় আনতে হবে, এবং তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রমাণ করতে হবে।
কমপ্লিমেন্টারিটি নীতি
আইসিসি তখনই পদক্ষেপ নেবে, যখন একটি রাষ্ট্র নিজস্ব বিচারব্যবস্থায় অপরাধের সুষ্ঠু বিচার করতে ব্যর্থ হয়।
- উদাহরণস্বরূপ:
- অনিচ্ছা (Unwillingness): যখন একটি সরকার অপরাধীদের রক্ষা করতে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হয়।
- অক্ষমতা (Inability): যখন রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা কার্যকর নয় বা ভেঙে পড়ে।
বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা এই নীতির আলোকে মূল্যায়ন করতে হবে।
মামলা দায়েরের সম্ভাব্য পদ্ধতি
আইসিসি-এর আওতায় মামলা তোলার তিনটি প্রধান পদ্ধতি:
- জাতীয় রেফারেল: বাংলাদেশের নতুন সরকার যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আইসিসি-কে রেফার করে।
- আইসিসি প্রসিকিউটরের উদ্যোগ: আইসিসি প্রসিকিউটর যদি মনে করেন যে অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে, তবে তারা তদন্ত শুরু করতে পারেন।
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ: নিরাপত্তা পরিষদ কেস রেফার করতে পারে। তবে এটি স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতার কারণে জটিল হতে পারে।
রাজনৈতিক ও আইনি বাস্তবতা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও, এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জটিল এবং কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।
- প্রমাণের অভাব: অভিযোগ তুলতে হলে অপরাধের যথাযথ প্রমাণ প্রয়োজন।
- রাজনৈতিক প্রভাব: অনেক সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কার্যক্রম রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়।
- সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা: একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা সবসময় সম্ভব নয়।
শিক্ষানবিশ আইনজীবীর দৃষ্টিভঙ্গি
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও, তা আইসিসি-এর আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। যদি জাতীয় বিচারব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করে, তবে আইসিসি-এর হস্তক্ষেপ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তবে, আইসিসি একটি শেষ অবলম্বন হিসেবে কাজ করতে পারে, যদি এটি প্রমাণিত হয় যে অপরাধীরা বিচার এড়িয়ে যাচ্ছে।
গ্রন্থপঞ্জী
- Rome Statute of the International Criminal Court, 1998.
- International Criminal Court official website: https://www.icc-cpi.int.
- Cassese, Antonio. International Criminal Law, Oxford University Press, 2013.
- Schabas, William A. An Introduction to the International Criminal Court, Cambridge University Press, 2017.
- Akande, Dapo. “The Jurisdiction of the ICC Over Genocide and Crimes Against Humanity.” American Journal of International Law, 2009.
উপসংহার
আইসিসি তখনই কার্যকর হয়, যখন জাতীয় বিচারব্যবস্থা অপরাধীদের বিচারে ব্যর্থ হয়। শেখ হাসিনার প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে, তা বিচার করতে হলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যথাযথ প্রমাণ এবং কূটনৈতিক সমর্থন অপরিহার্য।