বাংলাদেশের সংবিধান, ১৯৭২ সালে প্রণীত, দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে গণ্য হয়। এতে মোট ১১টি ভাগ এবং ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে, যা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য, সরকারের কাঠামো, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। সংবিধানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল নীচে পর্যালোচনা করা হলো:
১. রাষ্ট্রের মূলনীতি
অনুচ্ছেদ ১-৭:
- বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব (অনুচ্ছেদ ১):
বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র। - রাষ্ট্রের মূলনীতি (অনুচ্ছেদ ৪):
জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের মূল স্তম্ভ। - সর্বময় ক্ষমতা (অনুচ্ছেদ ৭):
সকল ক্ষমতা জনগণের এবং এটি সংবিধানের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হবে।
২. মৌলিক অধিকার
অনুচ্ছেদ ২৬-৪৭:
- আইনের দৃষ্টিতে সমতা (অনুচ্ছেদ ২৭):
এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিকের সমান এবং আইনের দৃষ্টিতে সমান সুরক্ষা নিশ্চিৎ করা হয়েছে। - বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার (অনুচ্ছেদ ৩৯):
প্রত্যেক নাগরিক বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার ভোগ করবে। - ধর্মীয় স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ৪১):
প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
৩. নির্বাচন এবং সরকার ব্যবস্থা
অনুচ্ছেদ ৫৫-৭০:
- মন্ত্রিপরিষদ (অনুচ্ছেদ ৫৫):
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা দ্বারা সরকার পরিচালিত হয়। - সংসদের সদস্যদের যোগ্যতা (অনুচ্ছেদ ৬৬):
সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। - দলত্যাগের জন্য পদচ্যুতি (অনুচ্ছেদ ৭০):
কোনো সংসদ সদস্য দল পরিবর্তন করলে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে।
৪. বিচার বিভাগ
অনুচ্ছেদ ৯৪-১১৬:
- স্বাধীন বিচার বিভাগ (অনুচ্ছেদ ৯৪):
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। - সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা (অনুচ্ছেদ ১০২):
সংবিধানের অধীনে রিট জারি করার এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে।
৫. জরুরি অবস্থা ও সংশোধনী
অনুচ্ছেদ ১৪১-১৪২:
- জরুরি অবস্থা (অনুচ্ছেদ ১৪১):
জাতীয় সংকটে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। - সংবিধান সংশোধন (অনুচ্ছেদ ১৪২):
সংবিধানের যেকোনো অংশ সংশোধনের জন্য সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন।
৬. মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা
অনুচ্ছেদ ২৫:
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উপসংহার:
বাংলাদেশের সংবিধান একটি প্রগতিশীল এবং জনগণের স্বার্থে রচিত নীতিমালা। এটি মানবাধিকার, গণতন্ত্র, এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংবিধানের সঠিক প্রয়োগই দেশের উন্নয়ন এবং সুশাসনের প্রধান চাবিকাঠি।
গ্রন্থপঞ্জি
১. বাংলাদেশের সংবিধান (১৯৭২):
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটি কর্তৃক প্রণীত।
প্রাপ্তি: সংবিধানের প্রতিলিপি - আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার
২. রহমান, মোহাম্মদ সিরাজুল (২০২০):
বাংলাদেশ সংবিধান: একটি বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা, ঢাকা: ন্যাশনাল বুক কোম্পানি।
৩. হোসেন, ব্যারিস্টার শফিকুল (২০১৮):
সংবিধান ও মানবাধিকার আইন, ঢাকা: ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।
৪. মানবাধিকার সংস্থা (২০২১):
মানবাধিকার ও বাংলাদেশ সংবিধান, ঢাকা: মানবাধিকার পরিষদ।
৫. ইসলাম, কাজী আব্দুল্লাহ (২০১৯):
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা: স্বাধীনতা ও চ্যালেঞ্জ, ঢাকা: আইন ও গবেষণা পরিষদ।
৬. আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সংস্থা (২০২২):
Constitutional Law in South Asia: Focus on Bangladesh, নিউ ইয়র্ক: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।
উপরোক্ত গ্রন্থসমূহ এবং সংবিধানের মূল পাঠ্যের ভিত্তিতে আলোচনাটি প্রণীত।
প্রস্তুতকারকঃ Dipankar Biswas. Apprentice Lawyer, Dhaka District and Session Judge court
MObile: 01744427797
Email: dipankaronline444@gmail.com